তীর-কাঁচখেলা নাট্য উৎসব ও নাট্য সম্মাননা ২০২৪ : সম্মাননা পেলেন মঞ্চের ৮ অভিনেত্রী

তীর-কাঁচখেলা নাট্য উৎসব ও নাট্য সম্মাননা ২০২৪ : সম্মাননা পেলেন মঞ্চের ৮ একক অভিনেত্রী

শুক্রবার ৮ মার্চ ২০২৪ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটার আয়োজন করেছে 'তীর-কাঁচখেলা নাট্য উৎসব ও নারী নাট্য সম্মাননা ২০২৪'

সন্ধ্যা ছয়টায় মহিলা সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী একক অভিনয়ের জন্য মঞ্চের ৮ অভিনেত্রীকে সম্মাননা প্রদান করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক আফরোজা পারভীন, অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদ এবং সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী।


এবছর তীর-কাঁচখেলা নাট্য সম্মাননা ২০২৪ পেয়েছেন মোমেনা চৌধুরী, রোজী সিদ্দিকী, নাজনীন হাসান চুমকি, জুয়েনা শবনম, শামসি আরা সায়েকা, হাসিনা সাফিনা বানু উর্মি, সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা ও তনিমা হামিদ।

৮-১০ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী নাট্য উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন একুশে পদক ও আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর।

প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় মহিলা সমিতি মিলনায়তনে থাকছে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী। ৮ মার্চ প্রদর্শিত হয় থিয়েটার ফ্যাক্টরির নাটক 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে'আর ৯ মার্চ প্রদর্শিত হবে প্রাচ্যনাটের 'আগুনযাত্রা' এবং ১০ মার্চ হবে অনুস্বরের 'হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা'

উল্লেখ্য, প্রতি বছর মঞ্চনাটকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর মেধার মূল্যায়নে সিটি গ্রুপ ও কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটার যৌথভাবে নাট্য উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি সম্মাননা প্রদান করছে।

২০২২ সালে মঞ্চনাটকের চারজন খ্যাতিমান নারী নাট্যকার ও চারজন নারী নাট্য নির্দেশককে তীর-কাঁচখেলা নাট্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। নাট্যকার সাধনা আহমেদ, রুমা মোদক, মাহফুজা হিলালী ও নাসরীন মুস্তাফা এবং নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা, নূনা আফরোজ, ত্রপা মজুমদার ও হৃদি হক সম্মাননা পান।

২০২৩ সালে মঞ্চনাটকে সামগ্রিকভাবে নারীর মেধার মূল্যায়নে ৮ বিভাগের ৮ নারী অভিনয়শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা পান ঢাকা বিভাগ থেকে বটতলা থিয়েটারের কাজী রোকসানা রুমা, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের শুভ্রা বিশ্বাস, রাজশাহী বিভাগ থেকে সংশপ্তক থিয়েটারের নিভা সরকার পূর্ণিমা, খুলনা বিভাগ থেকে যশোর বিবর্তনের সাবিকুননাহার কাকলী, রংপুর বিভাগ থেকে দিনাজপুর নাট্য সমিতির রেনু আরা বেগম, বরিশাল বিভাগ থেকে শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের তন্দ্রা মল্লিক, সিলেট বিভাগ থেকে মনিপুরী থিয়েটারের জ্যোতি সিনহা এবং ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে সাহিত্য সংসদ নাট্য প্রকল্প ও মুকুল ফৌজ সাংস্কৃতিক একাডেমির অভিনেত্রী আনোয়ারা সুলতানা।

আয়োজনটি নিয়ে ডলি জহুর বলেন, বাংলা সংস্কৃতিতে মঞ্চনাটকের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির সাথে এক সময় উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির নাট্যচর্চার যোগাযোগ ঘটেছিল। এরপরও পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক বাস্তবতায় বাংলা মঞ্চনাটকে নারীর অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বহুকাল। ১৯৫০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গে শওকত ওসমানের লেখা তস্কর ও লস্কর নাটকের মাধ্যমে মঞ্চে নারী অভিনেত্রীর যাত্রা শুরু হয়। তখন এ ঘটনা আলোচিত হয়েছিল দুঃসাহসিক পদক্ষেপ হিসেবে। এখনো মঞ্চনাটকে নারীর পদযাত্রাকে বহু সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিরোধ ও বৈষম্যকে সাহসের সাথে পাশ কাটিয়ে চলমান রাখতে হয়। এই পরিস্থিতিতে যখন এমন আলোচনা শুনি যে, ঢাকার মঞ্চে একক নাটক বা মনোড্রামাকে সফল করতে নারী অভিনেত্রীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তখন তা আমার জন্য আনন্দের সংবাদ বলে মনে হয়। একক নাটকে অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শনে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যাকে ওয়ান ম্যান শো বলা হলেও এখন ম্যান শব্দটির পরিবর্তন ঘটানোর সময় এসেছে। অন্ততঃ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে একে ওয়ান উইমেন শো বলা যেতে পারে

তিনি আরো বলেন,এরকম প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে সামগ্রিকভাবে নারীর মেধার মূল্যায়নে মঞ্চে একক অভিনয় দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন, এমন ৮ জন নারী অভিনয়শিল্পীকে তীর-কাঁচখেলা নারী নাট্য সম্মাননা ২০২৪ প্রদান করা হচ্ছে জেনে সঙ্গতকারণেই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এজন্য কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি জেনেছি গত দুই বছর ধরে মঞ্চনাটকে নারীর মেধার মূল্যায়নে এরকম আয়োজন করছে কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটার। নিঃসন্দেহে এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আগামীতেও এই উদ্যোগ চলমান রেখে মঞ্চনাটকে নতুন নতুন আঙ্গিকে নারীর মেধার উন্মোচন ঘটুক, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি

কাঁচখেলা ও নারী দিবস

বাংলাদেশের ফরিদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় অভিনয় শিল্প প্রদর্শনের সৃজনশীল দক্ষতা প্রদর্শনের নাম হচ্ছে কাঁচখেলা। রাতের আঁধারে কুপি বা হারিকেনের আলোতে পর্দার পেছনে ছায়া তৈরি করে গল্প ফুটিয়ে তোলার অসাধারণ দক্ষতায় কাঁচখেলা দর্শকদের আনন্দ দেয় এখনো। কাঁচখেলা বিনোদনের এক ভিন্নধর্মী স্বাদের কথা শোনাতে চায়, আধুনিক পৃথিবীর বাস্তবতায় হয়ে ওঠে গণমানুষের নির্মল ও প্রকৃতিঘনিষ্ঠ সৃজনশীলতার প্রতিরূপ।

আবহমান গ্রামবাংলায় যে কোনো উৎসব-পার্বনে নারীর সংস্কৃতিমনের প্রকাশ ঘটে। তা সে পিঠা-পুলি তৈরিতেই হোক, দুপুরের অবসরে নকশী কাঁথা সেলাই করার সময়ে হোক্ কিংবা বিয়ের গীত গাওয়ার ক্ষেত্রেই হোক্। কাঁচখেলা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার নারীর ঘরোয়া বিনোদন সৃষ্টির প্রয়াসে। বাংলার নারী বাংলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, একথা কাঁচখেলার ক্ষেত্রেও সত্য।

আর তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কাঁচখেলা সংস্কৃতির সাথে নারীর মেলবন্ধনকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে তুলে ধরতে চায়। বাংলা মঞ্চনাটকের ইতিহাস প্রখ্যাত অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর অসামান্য প্রতিভা ও আত্মত্যাগের মহীমায় ভাস্মর। ক্রমশঃ নারীর পদচারণায় বাংলার মঞ্চ সমৃদ্ধ হয়েছে। অভিনয়, নির্দেশনা, নাটক রচনাসহ নাটকের কারিগরী নানা ক্ষেত্রে নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি বাংলাদেশকে গর্বিত করে।

কাঁচখেলা আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪-এ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে সামগ্রিকভাবে নারীর মেধার মূল্যায়নে মঞ্চে একক অভিনয় দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন, এমন ৮ জন নারী নাট্য অভিনয়শিল্পীকে সম্মানিত করছে। এর আগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২-এ মঞ্চনাটকের গুণী ৪ নাট্যকার ও ৪ নির্দেশককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৮ নারী নাট্য অভিনয়শিল্পীকে তীর-কাঁচখেলা নাট্য সম্মাননা ২০২৩ প্রদান করা হয়। দুই বছরই আয়োজন করা হয়েছিল নাট্য উৎসবের।

নারীর মেধাশক্তির জয়ের মাধ্যমে জয় হোক্ বাংলা মঞ্চনাটকের।

 

মোমেনা চৌধুরী

মঞ্চাভিনেত্রী

শুন্যন রেপার্টরি থিয়েটার

গত তিন দশক ধরে এ দেশের ছোটপর্দা, মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন চিত্রে দাপটের সাথে অভিনয় করে আসা বগুড়ার সন্তান মোমেনা চৌধুরীর প্রথম পরিচয় তিনি একজন মঞ্চ অভিনেত্রী। এরপর টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ছাড়াও তিনি হালদা, নদীজন, একাত্তরের ক্ষুদিরাম, অনিশ্চিত যাত্রা, স্বপ্নডানা, রিকশা গার্ল ও নাইওরসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সাংস্কৃতিক জীবনের শুরুতে গানের প্রতি বেশী মনযোগ থাকলেও অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল বগুড়ায়, ইয়থকয়ার নামের বিখ্যাত থিয়েটার দলের সাথে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে বগুড়া থিয়েটারে নাম লিখিয়ে অভিনয়ের প্রতি মনযোগী হন। জীবনের প্রয়োজনে বগুড়া থেকে গাজীপুরে এসে গাজীপুরের 'অবশিষ্ট মঞ্চায়ন পরিষদ' এ যোগ দেন। বিখ্যাত নাট্যজন মাসুম আজিজ, মামুনুর রশীদ, মান্নান হীরার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাসুম আজিজের পরামর্শে ১৯৯১ সালে ঢাকার আরণ্যক থিয়েটারে যোগ দেন। তারপর থেকে আরণ্যকেই আছেন। ২০১১ সালে একক অভিনেত্রী হিসেবে মোমেনা চৌধুরীর আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'শুন্যন রেপার্টরি থিয়েটার' এর প্রথম পরিবেশনা 'লাল জমিন' নাটকের মাধ্যমে। উনিশশ' একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক নির্যাতিত কিশোরীর আর্তনাদ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লুটেরাদের রাজ্য হয়ে ওঠা বাংলাদেশে কিশোরীর মনে জেগে ওঠা নানা প্রশ্নের কাহিনী 'লাল জমিন'। নাটকটি রচনা করেছেন মান্নান হীরা, নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ও ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে 'লালজমিন' নাটকের তিনশ'রও বেশি প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় একটি বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছেন অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী। এতো অল্প সময়ে কোনো একক মঞ্চ নাটক এতো বেশিবার প্রদর্শিত হওয়া বাংলাদেশে তো বটেই বিশ্বের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা।

 

রোজী সিদ্দিকী

মঞ্চাভিনেত্রী

ঢাকা থিয়েটার

বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকীর বাবা আবুল কাশেম সিদ্দিকী, মা আলেয়া সিদ্দিকী এবং স্বামী শক্তিমান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। মতিঝিল টিএ্যান্ডটি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু। কলেজ সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে ৫ বছর বয়স থেকেই নাচ, গান, আবৃত্তি, ডিবেট, অভিনয় ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ছিলেন পরিচিত মুখ। ছোটবেলায় মতিঝিল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন, পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা রোজীর সমস্ত অনুপ্রেরনায় ছিলেন বাবা এবং মেজো বোন রেবা। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয় পেশাদারি মনোভাব নিয়ে থিয়েটার এবং টেলিভিশনে অভিনয়ের যাত্রা। ১৯৯২ সালে 'পদ্মা নদীর মাঝি' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অভিনয়ের শুরু, এরপর অনেক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রখ্যাত নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমেদের হাত ধরে থিয়েটার দলে যুক্ত হন। অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে বিয়ে করার পর ১৯৯৪ সালের ২৯ জুলাই যোগ দেন ঢাকা থিয়েটারে এবং দলের প্রায় সব প্রযোজনায় যুক্ত ছিলেন তিনি। 'মুনতাসির', 'হাতহদাই', 'চাকা', 'একাত্তরের পালা', 'যৈবতী কন্যার মন', 'মার্চেন্ট অফ ভেনিস', 'বনপাংশুল', 'প্রাচ্য', 'ণ নৈরামনি', 'ধাবমান', 'পঞ্চনারী আখ্যান', 'রাইকথকতা', 'আওয়ার কান্ট্রিজ গুড' ইত্যাদি নাটকে তার অভিনয় দেশে-বিদেশে দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। রোজী সিদ্দিকীর প্রথম একক অভিনয়ের নাটক 'পঞ্চনারী আখ্যান'। হারুন রশীদের লেখা এই নাটকটির নির্দেশক শহীদুজ্জামান সেলিম। ২০১২ সাল থেকে নাটকটি দেশে এবং দেশের বাইরে মঞ্চস্থ হয়ে দর্শকদের মুগ্ধতা কুড়িয়েছে। রোজী এখানে একাই জোলেখা, অন্তরা, মনোরমা, মরিয়ম এবং মমতাজ চরিত্রে অভিনয় করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের পাঁচ নারীর মর্মন্তুদ জীবনকাহিনী অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরেছেন দর্শকদের সামনে।

 

নাজনীন হাসান চুমকি

মঞ্চাভিনেত্রী

দেশ নাটক

দাউদ হোসেন জোয়ার্দার এবং নাজমা বানুর কন্যা নাজনীন হাসান চুমকি বাংলাদেশের খ্যাতনামা মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যকার, চিত্রপরিচালক এবং উপস্থাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স চুমকির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চুয়াডাঙ্গায়। ১৯৯২ সালে থিয়েটার জীবন শুরু করেন চুয়াডাঙ্গার 'অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন' এ। ১৯৯৬ সালে অভিনয়ের জন্য ঢাকায় এসে থিয়েটার গ্রুপ দেশ নাটকের সদস্য হন। থিয়েটারের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন চিত্র, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম চলচ্চিত্র তানভীর মোকাম্মেল-এর 'লালন'। এরপর ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ এর 'ঘানি' এবং ২০১৩ সালে 'একই বৃত্তে' এবং ২০২২ সালে আউয়াল রেজা রচিত ও নির্দেশিত 'মেঘ রোদ্দুর খেলা'য় তার অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে। 'ঘানি'তে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। 'একই বৃত্তে' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের বিবেচনায় সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন 'মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার'। এছাড়াও ২০০১ সালে হাফিজ রেদু রচিত এবং সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক 'গহরগাছি' তে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে 'বাচসাস' পুরস্কার অর্জন কেেরছন এই গুণী অভিনেত্রী। নিয়মিত মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা ও উপস্থাপনাতেও সমান ভাবে নিরলস কাজ করে চলেছেন তিনি। অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের সহ-সাধারণ সম্পাদক, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ এবং ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সদস্য হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন সাধনা'র প্রযোজনায় সাইমন জাকারিয়ার চিত্রনাট্যে 'সীতার অগ্নিপরীক্ষা' নাটকে নাজনীন হাসান চুমকি'র শক্তিশালী অভিনয় দেশে ও বিদেশে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০১০ সালে মঞ্চে আসা নাটকটির নির্দেশকও তিনি।

 

জুয়েনা শবনম

মঞ্চাভিনেত্রী

স্বপ্নদল

বাংলাদেশের মঞ্চে 'হেলেন কেলার' নামে খ্যাত জুয়েনা শবনম মূলত একজন অভিনয়শিল্পী, সংগঠক ও প্রশিক্ষক। দেশ-বিদেশে প্রশংসিত নাট্যসংগঠন 'স্বপ্নদল' এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য এবং প্রশিক্ষণ সম্পাদকও তিনি। 'ত্রিংশ শতাব্দী' প্রযোজনার অন্যতম অভিনেত্রী হিসেবে জাপানের 'ফেস্টিভ্যাল টোকিও ২০১৮', ইংল্যান্ডের 'এ সিজন অব বাঙলা ড্রামা ২০১৫', ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (দিল্লি)-র '১৭তম ভারত রঙ মহোৎসব ২০১৫'সহ 'চিত্রাঙ্গদা', 'স্পার্টাকাস', 'হরগজ', মাইমোড্রামা 'জাদুর প্রদীপ' ও মাইমোড্রামা 'ম্যাকবেথ' প্রভৃতি প্রযোজনার সঙ্গেও ভারতের নানা উৎসবে অংশগ্রহণ করে অভিনয়ের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন জুয়েনা শবনম। মনোড্রামা 'হেলেন কেলার'-এ একক অভিনয় জুয়েনা শবনমকে নাট্যাঙ্গণে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ২০১৮-এ 'হেলেন কেলার' প্রযোজনাটি জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আমন্ত্রণে টোকিওতে এবং পরবর্তীতে ভারতের চারটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও ৬টি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে এনেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পেশাগতভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে সরকারি তিতুমীর কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। কলেজের একমাত্র নাট্যসংগঠন 'তিতুমীর নাট্যদল'-এর মডারেটর হিসেবে নাট্যদলটিকে যোগ্যতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। জুয়েনা শবনমের জীবনসঙ্গী বাংলাদেশে নবীন প্রজন্মের অন্যতম নাট্যনির্দেশক-অভিনেতা-সংগঠক প্রশিক্ষক, নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল-এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান সম্পাদক এবং বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশানের চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন। সর্বার্থে থিয়েটার পরিবার এই নাট্যদম্পতির কন্যা নিসর্গ শবনম এবং পুত্র অনিন্দ্য অন্তরিক্ষ-ও নিয়মিতভাবে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্য নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত।

 

শামসি আরা সায়েকা

মঞ্চাভিনেত্রী

পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি)

মঞ্চাভিনেত্রী শামসি আরা সায়েকা একজন গুণী নৃত্যশিল্পী, 'নবরস একাডেমি'র প্রিন্সিপাল এবং হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নৃত্যের শিক্ষক। ১৯৯৮ সাল থেকে বুলবুল ললিতকলা একাডেমির এবং ২০০৬ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাংস্কৃতিক বিভাগের শিক্ষক তিনি। ছিলেন বাংলা একাডেমির নৃত্যশিক্ষকও। থিয়েটারে অভিনয়ের ইচ্ছে পূরণে ১৯৯৬ সাল থেকে পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) এর সদস্য হিসেবে সংযুক্ত হয়ে অভিনয় করেছেন 'চন্দ্রাবতী', 'সোজন বাদিয়ার ঘাট', 'ক্ষেতমজুর খইমুদ্দিন', 'মাউসট্রাপ', 'বেদের মেয়ে', 'কালের যাত্রা', 'ম্যাকবেথ', 'কালরাত্রি', 'গুনজান বিবির পালা', 'অবজেকশন ওভাররুলড', 'জনকের অনন্ত যাত্রা', 'রক্তকরবী', 'কীর্তিগাথা', 'উনপুরুষ', 'আলোয়া' এবং একক নাটক 'গহনযাত্রা', 'রাক্ষুসী' 'যৈবতী কন্যার মন' নাটকে। পথনাটক 'ভুলিনি একাত্তর', 'চোর', 'ট্রাইবুন্যাল', 'পরিচয়' এবং 'তারামন বিবি' তে শামসি আরা সায়েকার অভিনয় দর্শকনন্দিত হয়েছে। মঞ্চনাটক 'উনপুরুষ' নির্দেশনা দিয়েছেন। 'পরিচয়' নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্যও তার লেখা। এছাড়াও বহু নাটকের পোষাক পরিকল্পনা ও কোরিওগ্রাফি করেছেন বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেল, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শামসি আরা সায়েকা। বেশ কিছু নৃত্যনাট্যেও তিনি তার নৃত্যদক্ষতার পাশাপাশি অভিনয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন। পৃথিবী জুড়ে গণহত্যা, রক্তপাত ও এর বিপরীতে মানবতার জয়গানের গল্প নিয়ে পদাতিক নাট্য সংসদের মঞ্চনাটক 'গহনযাত্রা'য় একক অভিনয় করেছেন শামসি আরা সায়েকা। রুবাইয়াৎ আহমেদের রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র 'সালমা' স্বপ্ন দেখা এক উচ্ছ্বল তরুণীর প্রতিরূপ। প্রাণভয়ে লোকালয় ছেড়ে মৃতের শহরে পাড়ি দেয়া এই তরুণীর মুখ দিয়ে নাট্যকার পৃথিবীজুড়ে উগ্রপন্থার গল্প বলেছেন, যার কারণে দেশে দেশে যুদ্ধ চলছে, নিহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ, লাঞ্ছিত হচ্ছে অসংখ্য নারী।

 

হাসিনা সাফিনা বানু উর্মি

মঞ্চাভিনেত্রী

সপ্তর্ষি থিয়েটার

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম. সাইফুদ্দিন আহমেদ ও মরহুমা ডাক্তার হোসনে আরা আহমেদের দ্বিতীয় সন্তান হাসিনা সাফিনা বানু উর্মি শৈশবে শিশু একাডেমির নৃত্যশিক্ষক হাবিবুল চৌধুরীর কাছে হাতেখড়ি ও পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে রাহিজা খানম ঝুনুর তত্ত্বাবধানে নৃত্যশিক্ষা গ্রহণ ও সনদ লাভ করেন। আহমদ বাওয়ানী একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে উর্মি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৯২ সালে এক নাট্য কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উর্মির থিয়েটার জীবনের শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে ঋত্বিক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকির হাত ধরে দেশের প্রথিতযশা নাট্যদল 'লোক নাট্যদল' এ যোগ দিয়ে নিয়মিত দেশে ও দেশের বাইরে মঞ্চনাটকে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন। উর্মির অভিনীত মঞ্চনাটকের মধ্যে অন্যতম 'কুঞ্জুস', 'পদ্মানদীর মাঝি', 'তপস্বী ও তরঙ্গিনী', 'মধুমালা', 'নির্মাণ'। ১৯৯৯ সালে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুবর্ণজয়ন্তীতে ঋত্বিক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকি গ্রন্থিত ও নির্দেশিত গীতিনাট্য 'আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস' প্রযোজনায় বিশ্বনন্দিত জননেত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকায় উর্মির অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্বয়ং মাননীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও স্বনামধন্য নাট্যদল 'আরণ্যক' এ যুক্ত হয়ে এই দলের প্রযোজনা 'সংক্রান্তি', 'এবং বিদ্যাসাগর', 'ইবলিস', 'ওরা কদম আলী', 'স্বপ্নপথিক' 'রাঢাঙ' নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের সান্নিধ্য, থিয়েটারভাবনা উর্মির অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছে। মঞ্চের পাশাপাশি টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০২১ সালে থিয়েটার নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়ে শুরু করেন 'সপ্তর্ষি থিয়েটার' এর যাত্রা। 'সপ্তর্ষি থিয়েটার' এর প্রথম প্রযোজনা 'প্রমিলা আখ্যান' নাটকে তার একক অভিনয় দেশে ও দেশের বাইরে দর্শকনন্দিত হয়েছে।

 

সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা

মঞ্চাভিনেত্রী

ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠী

বাংলাদেশের কিংবদন্তী অভিনয়শিল্পী সৈয়দ মহিদুল ইসলাম ও গৃহিনী নাদিরা ইসলামের কন্যা সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা নিয়মিত অভিনয় করছেন টেলিভিশন, রেডিও, চলচ্চিত্র এবং মঞ্চে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'সংস্কৃতি মঞ্চ' নামক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেছেন। টিভি প্রোগ্রাম মার্ক'স অলরাউন্ডারে ছিলেন বিচারক। গ্রামীন ফোন, সেন্টার ফ্রুট, বিডি টিকেটস ডট কম এর বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। দিশা অভিনয় করেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিক, একক নাটক এবং টেলিফিল্মে। রুবেল হাসান পরিচালিত চলচ্চিত্র 'নিকষ', রায়হান রাফির 'সুড়ঙ্গ', প্রসূন রহমানের 'ঢাকা ড্রিম', সৈয়দ মহিদুল ইসলামের 'আমি কার', আবু সাইয়ীদের 'সংযোগ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। য়্যুনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক দিশা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য। অকাল প্রয়াত বাবা সৈয়দ মহিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা মঞ্চে উপহার দিচ্ছেন একের পর এক দর্শকপ্রিয় নাটক। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করেছেন ব্যতিক্রম শিশু নাট্যদল। সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা'র নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে রমাপ্রসাদ বনিকের লেখা 'সহবাস' এবং আরিফ হায়দারের 'না মানুষ'। স্বামী গুণী নাট্য নির্দেশক সাইফুল ইসলাম সোহাগের নির্দেশনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দুরাশা' নাটকে একক অভিনয় করে দেশে-বিদেশে খ্যাতি কুড়িয়েছেন সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা। ব্যতিক্রমের নিরীক্ষাধর্মী প্রযোজনাগুলোর অন্যতম নাটক এটি, যার মূল বক্তব্য প্রকৃত ধর্ম মানুষকে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে ভালবাসতে শেখায়।

 

তনিমা হামিদ

মঞ্চাভিনেত্রী

নাট্যচক্র

বাংলাদেশের খ্যাতনামা নাট্যদম্পতি এম. হামিদ ও ফাল্গুনী হামিদের একমাত্র সন্তান তনিমা হামিদ টেলিভিশন-বেতার এবং থিয়েটারে অভিনেত্রী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। বয়স যখন মাত্র তিন বা চার, তখন থেকে অভিনয় শুরু। বিখ্যাত থিয়েটার গ্রুপ 'নাট্যচক্র' এর একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য তিনি। দলের প্রযোজনা 'লেট দেয়ার বি লাইট', 'চক সার্কেল', 'বিলকিস বানুর কন্যারা', 'হায়েনা', 'আলোকিত হোক', 'ভদ্দরনোক', 'মৃত্যুক্ষুধা'র মতো আরও অনেক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দারিও ফো এবং ফ্রাংকা রামের লেখা নাটক 'এ উইমেন অ্যালোন' এর বাংলা নামকরণে 'একা এক নারী' নাটকটিতে তনিমা হামিদের একক অভিনয় দেশে ও দেশের বাইরে দর্শকনন্দিত হয়েছে। আবদুস সেলিমের অনুবাদে ও দেবপ্রসাদ দেবনাথের পরিচালনায় নাটকটি নাট্যচক্রের ৫৪তম প্রযোজনা। আপাতদৃষ্টে অবাস্তবতা থেকে এক শোকাবহ অভিজ্ঞতায় উত্তীর্ণ এক বহুতল ফ্ল্যাটে বন্দী নিঃসঙ্গ এক নারীর স্বগতোক্তির সাথে পুরুষের এক তরফা আধিপত্য, নারীর যৌনবঞ্চনা, বাধ্যতামূলক গৃহস্থালি কর্ম, পরপুরুষের যৌন নিপীড়ন এবং সর্বোপরি গৃহবন্দিত্ব বিশ্বের সকল নারীর সাথে যোগসূত্র গড়ে তোলে তনিমা হামিদের বলিষ্ঠ অভিনয়ের মাধ্যমে। মঞ্চে অভিনয় এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাটক পরিচালনা, বিনোদনমূলক ও চলমান নানা বিষয়ের উপর অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন নির্মাণ এবং মিডিয়াতে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী নবীনদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. তে মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়া মেধাবী তনিমা হামিদ। নারী বিষয়ক লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন মাসিক 'সীমন্তিনী'র সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থা 'এপিক' এর পরিচালক তিনি, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন প্রোডাকশন হাউজ 'টেলিরিয়েল লিমিটেড' এরও পরিচালক।