মঞ্চে বাতিঘরের নাটক ‘প্যারাবোলা’

মঞ্চে বাতিঘরের নাটক ‘প্যারাবোলা’


বাংলাদেশের মঞ্চে নোবেলজয়ী বিখ্যাত ইতালিয়ান নাট্যকার দারিও ফোর বিখ্যাত রাজনৈতিক নাটক অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট (Accidental death of an Anarchist) অবলম্বনে নাটক প্যারাবোলানিয়ে এসেছে নাটকের দল বাতিঘর।



ইতালিতে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। পিন্নেলি নামক  এক রেল শ্রমিককে মিলানের পুলিশ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রেল স্টেশনে বোমা হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পিন্নেলি রহস্যজনকভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের চতুর্থ তলা থেকে নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।

বাতিঘরের ১৭তম প্রযোজনা প্যারাবোলা নাটকটিতে মূলত দুর্নীতি, ছদ্মবেশ, অনুপ্রবেশ, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং তদন্তের নানান অসঙ্গতি গুলো তীক্ষ্ণ সংলাপ, রসিকতা ও বক্রোক্তির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। বাচাল প্রকৃতির একজন খ্যাপা (প্রধান চরিত্র) একদিন ছদ্মবেশে একটি পুলিশ দপ্তরে অনুপ্রবেশ করে, একজন তদন্তকারী বিচারকের ভূমিকায়। সেখানে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকা, দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে ইতালির বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলো পুলিশ এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলো।

 

খ্যাপার দৃষ্টিভঙ্গি, বক্তব্য এবং নিখুঁত অভিনয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। একজন আসামীকে যেভাবে ট্রমাটাইজড করা হয়, সেই একই মিথ্যার ফাঁদে পড়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয় তদন্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। ঘটনা পরম্পরার নানান এ্যাঙ্গেল বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নাটকের শেষ অংশে গিয়ে উন্মোচিত হয় প্রকৃত সত্য। দর্শক জানতে পারে প্রকৃত নৈরাজ্যবাদী কে?

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় প্যারাবোলা নাটকের। এছাড়া ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে ৪টা প্রদর্শনী হয় নাটকটির।

নাটকটির নির্দেশক মুক্তনীল বলেনআমরা বিস্মৃতি পরায়ণ জাতি। যখন ঘটনা ঘটে তখন হই হই রই রই। আবার সময়ের ব্যবধানে ভুলে যাই। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতার সুযোগে আমাদের সাথে চলে মর্মান্তিক প্রহসন। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, কথা বলা যাবে না। এ যেন এক অকহতব্য বাস্তবতা। মানুষের জীবন নিয়ে চলে হেঁয়ালি ও তামাশা। সন্তান হারানো মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদে, বিচার প্রত্যাশা করে কিন্তু ন্যায় বিচারের প্রতীকের চোখ বাঁধা।

 

ছবিঃ বাতিঘর

মুক্তনীল মনে করেনকসমেটিক উন্নয়নের আড়ালে যে নিষ্ঠুর সত্যটি লুকিয়ে আছে আশংকা তা একসময় পুরো সমাজটাকে না গ্রাস করে ফেলে। উন্নয়ন যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়; তবে মানবিক বোধ ও নীতি নৈতিকতার যে ধস নেমেছে, এটি রোধ করা কি সম্ভব হবে এই যাত্রায়। 

রাষ্ট্রীয় হত্যার দায় আসলে কার? জবাব কে দেবে? জবাবদিহিতার অভাবের পরিসমাপ্তি কবে হবে? কেউ জানে না। নাটকটি মঞ্চে আনতে আমাকে উৎসাহিত করেছে উল্লেখিত বাস্তবতা,’ মুক্তনীল 

 

মূল নাটক: দারিও ফো

অনুবাদ: শাহানা জয় ও খালিদ হাসান রুমী

মঞ্চরুপ ও নির্দেশনা: মুক্তনীল

 

মঞ্চে

খ্যাপা: মুক্তনীল/খালিদ হাসান রুমী

সুপার: ফয়সাল মাহমুদ/সামি দোহা

বাতেন: তাজিম আহমেদ/ শিশির সরকার/ স্মরণ বিশ্বাস

ইন্সপেক্টর: শৈবাল সান্যাল/ বিজয় বনিক

সুখচান: শিশির সরকার/ তাজিম আহমেদ

ময়না: সোহানুর রহমান/ রুদ্র রোকন

মারিয়া: রুম্মান শারু/নাদিয়া হক

 

নেপথ্যে

সহঃ নির্দেশনা: শিশির সরকার

আলো: তানজিল আহমেদ

সেট,প্রপস,কস্টিউম: তাজিম আহমেদ

রূপসজ্জা: রুম্মান শারু

পোস্টার: আল মামুন খোকন

প্রযোজনা অধিকর্তা: সঞ্জয় গোস্বামী

মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা: বাতিঘরের কর্মী বাহিনী