বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘ডেথ সেন্টেন্স’ শীর্ষক প্রদর্শনী
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুবীর চৌধুরী কিউরেটোরিয়াল প্র্যাকটিস গ্র্যান্টপ্রাপ্ত জুয়েল এ রব এর কিউরেটেড ‘ডেথ সেন্টেন্স’ শীর্ষক প্রদর্শনী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে শুরু হয়েছে ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুল অতিথি হিসেবে ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা এর পরিচালক এম ফ্রাঁসোয়া গ্রোসজিন।
তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনীর অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। আর্ট সবসময় সমাজের গল্প নির্ভয়ে, নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরে। এখানেও সেই প্রয়াস নেয়া হয়েছে যা আমাকে আনন্দিত করেছে ।’
বিশেষ অতিথি
হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী এবং শিল্প লেখক মুস্তাফা জামান। তিনি বলেন, ‘ভায়োলেন্স কে ফোকাস করে এই ইন্টারডিসিপ্লিনারি প্রদর্শনী একটি
সাহসী পদক্ষেপ। ইতিহাসের এই অংশটি কেও হয়তো সেভাবে তুলে ধরেনা। এই প্রদর্শনী
আমাদের ভাবাবে, জানাবে কিভাবে বারবার সামাজিক ও ভৌগলিক পটভূমির পরিবর্তনে যুদ্ধ, হত্যা ও
ধ্বংস জড়িত ছিল। ইতিহাসের এই দিকটাও তুলে ধরার প্রয়োজন আছে ।’
আনিসুজ্জামান সোহেল, ইমরান সোহেল, প্রমথেশ দাস পুলক, নাজমুন নাহার কেয়া এবং শিমুল দত্তর কাজ নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বহুমাত্রিক প্রদর্শনী। অ্যাক্রেলিক, নিউ মিডিয়া, ভাস্কর্য, ভিডিও আর্ট, স্কাল্পচার, জলরং, ড্রইং, মৃৎশিল্প সহ বিভিন্ন রকম মাল্টি ডিসিপ্লিনারী মাধ্যমে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
বেঙ্গল
ফাউন্ডেশনের পরিচালক,
শিল্পী ও সংগঠক সুবীর চৌধুরী স্মরণে ২০১৫
সালে সুবীর চৌধুরী গ্রান্টের প্রণয়ন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮
সালে উন্মুক্ত আহ্বানের মাধ্যমে জমা পড়া আবেদনের মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে বাছাই করে
জুয়েল এ রবের গবেষণা-প্রস্তাবটি সুবীর চৌধুরী কিউরেটরিয়াল প্র্যাকটিস গ্রান্টের
জন্য বিবেচিত হয়।
যুদ্ধ, যুদ্ধাস্ত্র
নির্মাণ ও ব্যবহারে মানুষের অংশগ্রহণ এবং ইতিহাসজুড়ে চলমান এক বিতর্কিত বাস্তবতার
প্রতি কিউরেটরের সংবেদনশীল দৃষ্টি ও প্রতিক্রিয়ার নিরিখে তৈরি হয়েছে ‘ডেথ সেন্টেন্স’ প্রকল্পের মূল ভাবনা। বিষয়টি নিয়ে জুয়েল এ রব কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যা
সময়োপযোগী।
কিউরেটরিয়াল স্টেটমেন্ট:
বিভিন্ন কালে মানুষ যেভাবে যুদ্ধ, হত্যা ও ধ্বংসে মেতে উঠেছে, ‘ডেথ সেনটেন্স’ প্রকল্পের মূল ভাবনা তৈরি হয়েছে তা নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে। ব্যক্তি-দল-রাষ্ট্র-সমাজ ও আদর্শের ওপর ভর করে আদিকাল থেকে মানুষ হত্যা ও ধ্বংসে লিপ্ত। এতে ইন্ধন জুগিয়েছে গোত্র ও জাতি-পরিচয়ের সংঘাত, আদর্শিক লড়াই ও ক্ষমতার তীব্র লিপ্সা। সহযোগ হিসেবে প্রণীত হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ আরও সুচারুভাবে পরিচালনার উপযোগী নানা তত্ত্ব ও নীতিমালা। প্রস্তরযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং প্রসারকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তিত হয়েছে মারণাস্ত্র ও হাতিয়ার। এসব বিবর্তন শুধু মারণাস্ত্রের কার্যকারিতাকে উন্নত করেনি, একই সঙ্গে তার কাঠামোগত সৌন্দর্য ও নান্দনিক আবেদনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফলে শোভা ও অশুভর এক ভয়াবহ সংমিশ্রণ ঘটেছে। এমনটা লক্ষ করা যায়, সাধারণ দুর্বৃত্তের মনোহারি নকশার ছোরা থেকে শুরু করে সমকালের রুচি ও ভঙ্গিমার লীলায়িত প্রকাশসম্পন্ন মারণাস্ত্রে।
পৃথিবীজুড়ে প্রায় সকল গোত্র ও বর্ণের মানুষ নির্বিচারে এসব প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে নিজেদের লক্ষ অর্জনে ও আধিপত্য বিস্তারে। পরবর্তীকালে জীবন-নাশক ইনজেকশন, হ্যান্ডগান, গ্রেনেড, মিসাইল, গ্যাসচেম্বার, পরমাণু বোমা, ইলেকট্রিক চেয়ারের মতো আরও কার্যকর ও ভয়ঙ্কর উদ্ভাবন মানুষের এই উদগ্র আকাঙ্ক্ষাকে পরিতৃপ্ত করেছে।
উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে আরও আকর্ষণীয়, চৌকস ও দৃষ্টিনন্দন ট্যাংক, বোমারু বিমান ও কপ্টার নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। এসব মারণযন্ত্রের নিপুণ অবয়ব সৃষ্টির পেছনে দৃশ্যকলাশিল্পের ভূমিকা অকিঞ্চিৎকর ছিল না। বরং কখনো কখনো তা শিল্পীর চর্চা এবং বোধকে শাণিত ও অগ্রগামী করেছে।
প্রশ্ন হলো, দৃশ্যশিল্পকলার দায় কি মানুষের মনকে গভীরভাবে আলোড়িত ও বিমুগ্ধ করা, নাকি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃতভাবে হানাহানি ও হত্যার দোসর হওয়া? এ-নিয়ে সমসাময়িককালের চিন্তাশীল পাঁচজন শিল্পী কী ভাবছেন তা-ই আমরা বর্তমান প্রদর্শনীতে খতিয়ে দেখতে চেয়েছি। অমানবিকতা ও নির্মমতা একজন শিল্পীকে কতটা ব্যথিত করে এবং করলেও তার প্রকাশভঙ্গি কিরূপ? বর্তমান বিশ্বের কূট রাজনীতি এবং তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা যুদ্ধ-অর্থনীতি কীভাবে শিল্পীর চিন্তা-চেতনাকে আলোড়িত করে? আমাদের সংবেদ কি ক্রমশ অসাড় হয়ে পড়ছে? এমন প্রশ্নের উদ্রেক করে এই প্রদর্শনী।
কিউরেটর: জুয়েল এ রব
বিস্তারিতঃ
সুবীর চৌধুরী কিউরেটোরিয়াল প্র্যাকটিস গ্র্যান্ট এক্সিবিশন:
ডেথ সেন্টেন্স
উদ্বোধনঃ বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
প্রদর্শনী চলবে: মার্চ ৩০, ২০২৪ পর্যন্ত
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার: ৪ টা - ৮ টা (রবিবার বাদে)
কামরুল হাসান প্রদর্শনশালা, লেভেল ১, বেঙ্গল
শিল্পালয়
বাড়ি ৪২, সড়ক ২৭, শেখ কামাল সারানী, ধানমন্ডি, ঢাকা