ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে হাসান আজিজুল হকের ৮ খণ্ডে সম্পূর্ণ রচনাবলি

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে হাসান আজিজুল হকের ৮ খণ্ডে সম্পূর্ণ রচনাবলি

বাংলা ছোটগল্পের রাজকুমার কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ষাট বছরের বেশিকাল ধরে সৃষ্টিশীল ও চিন্তাশীল রচনায় সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ বহু পুরস্কার। তাঁর গল্প অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, রুশ ও চেক ভাষায়।


ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ কীর্তিমান এই লেখকের সব লেখা নিয়ে প্রকাশ করেছে ৮ খণ্ডে সম্পূর্ণ রচনাবলি। পাশাপাশি থাকছে তাঁর সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে মূল্যায়ন ও আলোচনা। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার এই রচনাবলির প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন হায়াৎ মামুদ ও সনৎকুমার সাহা এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন সৈকত হাবিব।


রচনাবলির প্রথম খণ্ডে আছে 

ছোটগল্প 

সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য 

আত্মজা ও একটি করবী গাছ

উপন্যাস

শামুক

বৃত্তায়ন

গদ্য ও প্রবন্ধ

কথাসাহিত্যের কথকতা

চালচিত্রের খুঁটিনাটি

কিশোর উপন্যাস

লালঘোড়া আমি


রচনাবলির দ্বিতীয় খণ্ডে আছে 

ছোটগল্প

জীবন ঘষে আগুন

নামহীন গোত্রহীন

উপন্যাস

শিউলী

অণু-উপন্যাস

ছোবল

গদ্য ও প্রবন্ধ

অপ্রকাশের ভার

অতলের আঁধি


রচনাবলির তৃতীয় খণ্ডে আছে 

ছোটগল্প

পাতালে হাসপাতালে

আমরা অপেক্ষা করছি

প্রবন্ধ

কথা লেখা কথা

লোকযাত্রা আধুনিকতা সাহিত্য

জীবনদর্শন

সক্রেটিস

কিশোরগল্প

ফুটবল থেকে সাবধান

অনূদিত নাটক

চন্দর কোথায়


রচনাবলির চতুর্থ খণ্ডে আছে

ছোটগল্প

রোদে যাবো

মা-মেয়ের সংসার

উপন্যাস

আগুনপাখি

গদ্য ও প্রবন্ধ

ছড়ানো ছিটানো

সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য রচনা

চিন্তন-কণা


রচনাবলির পঞ্চম খণ্ডে আছে

ছোটগল্প 

বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প 

রাই কুড়িয়ে বেল

উপন্যাস

সাবিত্রী উপাখ্যান

গদ্য ও প্রবন্ধ 

কে বাঁচে কে বাঁচায় 

বাচনিক আত্মজৈবনিক 

রাজনীতির অলিগলি


রচনাবলির ষষ্ঠ খণ্ডে আছে

আত্মজীবনী 

ফিরে যাই ফিরে আসি 

উঁকি দিয়ে দিগন্ত 

এই পুরাতন আখরগুলি 

দুয়ার হতে দূরে 

গদ্য ও প্রবন্ধ 

লেখা, না লেখা


রচনাবলির সপ্তম খণ্ডে আছে

উপন্যাস

তরলাবালা

প্রবন্ধ 

রবীন্দ্রনাথ ও ভাষাভাবনা 

সাক্ষাৎকার 

উন্মোচিত হাসান 

গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত অন্যান্য সাক্ষাৎকার


রচনাবলির অষ্টম খণ্ডে আছে

মুক্তিযুদ্ধ

একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা

স্মৃতিগদ্য

টান

গদ্য ও প্রবন্ধ

স্মৃতিগদ্য: বন্ধনহীন গ্রন্থি

ভ্রমণ

লন্ডন ডায়রি

কবিতা ও কবিতা ভাবনা 

সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে

অনুবাদ 

কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প


প্রধান সম্পাদকের কথাতে হায়াৎ মামুদ বলেন, হাসান আজিজুল হক মূলত গল্পকার; কিছু উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ষাটের দশকে উন্মাতাল রাজপথের বৈরী পরিবেশে বাংলা কথাসাহিত্যে আবির্ভূত হন স্বাতন্ত্রিক গদ্য ও বর্ণনাভঙ্গির নিজস্ব প্রকরণকৌশলে। রাঢ়বঙ্গ তাঁর শিল্পজগতের ভিত্তিভূমি। জীবনসংগ্রামে ক্ষত-বিক্ষত মানুষের কথকতা উঠে এসেছে তাঁর গল্প- উপন্যাসে। সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ ভূষিত হন অসংখ্য পুরস্কারে। ডি-লিটও পেয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জীবনঘনিষ্ঠতা ও প্রাকরণিক স্বাতন্ত্র্যে তাঁর লেখা বিশেষরূপে সাহিত্যজগতে স্থান পাওয়ায় তিনি পাঠকপ্রিয়তার পাশাপাশি বাঙালির জীবনধারার অন্যতম রূপকার হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকেন। সাধারণ পাঠকের মন তো জয় করেনই- একাডেমিক পাঠ্য ও সিলেবাসভুক্ত হন এপার ও ওপার বাংলায়। দুই বাংলার পাঠক ও একাডেমিক চাহিদা পুরণের উদ্দেশ্যে তাঁর রচনাবলি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

রাঢ়বঙ্গের রূপকার হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ দোয়া বখ্শ্ এবং মাতা জোহরা খাতুন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৫৬ সালে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শন-এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

হাসান আজিজুল হকের কর্মজীবনটি বৈচিত্র্যপূর্ণ। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা শেষে ১৯৭৩-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

কলেজ জীবনেই তাঁর লেখালেখি শুরু। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় ভাঁজপত্র চারপাতায় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়। পরে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় ১৯৬০ সালে 'শকুন' নামে গল্প ছাপা হলে তাঁর সাহিত্যিক পরিচিতি ছড়াতে শুরু করে।

সৈকত হাবিব দীর্ঘদিন থেকে হাসানের সাহিত্যকর্ম নিয়ে কাজ করেন। তাঁর দৃষ্টিতে আমরা পূর্ণাঙ্গ হাসানকে বুঝতে পারবো। তাঁর শ্রমসাধ্য কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

হাসানের রচনাবলি প্রকাশের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ- এর স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েল ও আদিত্য অন্তর। এ ধরনের সংগ্রহে ব্যবসা-সফলতার চেয়ে শিল্পচেতনা ধারণ ও বহন করাই যে মুখ্য হয়ে ওঠে সেটি

জেনেও তাঁরা এ কাজে হাত দিয়েছেন। এজন্য তাঁদেরও ধন্যবাদ।

পাঠক ও সাহিত্যামোদীগণ হাসানকে একসঙ্গে পেয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে, বলেন হায়াৎ মামুদ।


প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পৃষ্ঠার এই ৮ খণ্ডের  রচনাবলির সেটের লিখিত মূল্য রাখা হয়েছে ১০,০০০ টাকা।


হাসান আজিজুল হক

হাসান আজিজুল হক (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ – ১৫ নভেম্বর ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যক হিসেবে পরিগণিত। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তাঁর সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি। আগুনপাখি (২০০৬) হক রচিত প্রথম উপন্যাস। তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন।

উইকিপিডিয়া