রামেন্দু মজুমদারের প্রবন্ধ সংকলন ‘আমাদের দায়, আমাদের প্রত্যাশা’

রামেন্দু মজুমদারের প্রবন্ধ সংকলন ‘আমাদের দায়, আমাদের প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয়েছে কথাপ্রকাশ থেকে। 

রামেন্দু মজুমদার বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের খ্যাতিমান অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক ও নির্মাতা। সেই সাথে সংস্কৃতির সামগ্রিক বিকাশে তাঁর রয়েছে উদ্যোগী ভূমিকা। জীবনাভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর লেখালেখি, বাংলা ও ইংরেজিতে তাৎপর্যময় কতক গ্রন্থের তিনি প্রণেতা। তাঁর সম্প্রতি রচিত প্রবন্ধগুলোর এই সংকলন সংস্কৃতি-জিজ্ঞাসার ব্যাপ্তি ও গভীরতা মেলে ধরছে। তিনি দায়বদ্ধ শিল্পী ও দায়মোচনের কর্মী, সংস্কৃতিপথে দীর্ঘ পরিক্রমণের উপলব্ধি বহন করে গ্রন্থভুক্ত নিবন্ধগুলো। আরও রয়েছে সংস্কৃতি-সাধকদের পরিচিতি, চলার পথের সাথি সারথি বন্ধুজনের প্রতিকৃতি। সহজিয়া অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে গভীরের বার্তা তিনি শুনিয়েছেন পাঠকদের, যা নিঃসন্দেহে হবে ব্যতিক্রমী পাঠ।

বইটি সম্পর্কে রামেন্দু মজুমদার বলেন, গ্রন্থভুক্ত লেখাগুলো বেশির ভাগই ২০২৩ সালে লেখা। মোটা দাগে তিনভাগে বিভক্ত করা যায় লেখাগুলোকে। প্রথম ৬টি লেখা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে। দ্বিতীয় ৫টি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পেরিয়ে যাওয়া সময়ের মূল্যায়ন এবং শেষের ৭টি প্রয়াত বন্ধুজনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমিতে যে অমর একুশে বক্তৃতা করেছিলাম, সেটাই প্রথম লেখা এবং একই সাথে গ্রন্থ শিরোনাম। একুশকে কেন্দ্র করে আমার মনে যেসব প্রশ্ন জেগেছে, তা ছড়িয়ে আছে এ অংশের লেখাগুলোতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতিক্রম করেছে শতবর্ষ, তা নিয়ে লেখা প্রাগ্রসর সংস্কৃতির শতবর্ষী বাতিঘর। একই সাথে আমাদের চেতনার বাতিঘর জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবর্ষেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। বাংলাদেশের নব নাট্যচর্চা ৫০ বছর পেরিয়েছে, সে সাথে আমাদের দল থিয়েটারও। সে সম্পর্কে আলাদা দুটো লেখা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন,  সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক গুণীজন প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আলী যাকের, রবিউল হুসাইন, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী-এই তিন বন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। আমাদের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফ, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনশিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ রেজা আলী, আমাদের নমস্য অভিনেতা মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রদ্ধেয় নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ, নারীনেত্রী আয়শা খানম ও আমার সতীর্থ বন্ধু রশীদ হায়দারের স্মৃতিতর্পণ রয়েছে আলাদা আলাদা লেখায়।

এসব লেখা বিভিন্ন সময়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক প্রথম আলো, কালি ও কলম, শব্দঘর, থিয়েটারওয়ালা, থিয়েটার এবং কয়েকটি স্মারকগ্রন্থে প্রকাশ হয়েছিল। 

বইটি তে আছে,আমাদের দায়, আমাদের প্রত্যাশা; দায় আমাদের সবার; একুশের দাবি, একুশের অঙ্গীকার; নায়কের সন্ধানে; আমার বাংলা একাডেমি; বঙ্গবন্ধুর লেখকসত্তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি; আমাদের নাটক: ৫০ পেরিয়ে; পঞ্চাশ পেরিয়ে আমাদের দল; প্রাগ্রসর সংস্কৃতির শতবর্ষী বাতিঘর; জন্মশতবর্ষে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী; চ্যানেল আই: আপন চ্যানেল; বন্ধুত্ব এখন অনন্তকালের; সৃজনে-সংগ্রামে হাসান আরিফ; বিটপী ও রেজা ভাইয়ের স্মৃতি অমলিন; মোহাম্মদ জাকারিয়া: পরিশীলিত অভিনয়; মমতাজউদদীন আহমদ: নাটকে সমর্পিত একজন; আয়শা খানম: অন্ধকারে আলো; রশীদ হায়দার: অভিমানী বন্ধু আমার।


রামেন্দু মজুমদার:

জন্ম ১৯৪১ সালে লক্ষ্মীপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাশ করে কিছুদিন অধ্যাপনার পর পেশা হিসেবে বেছে নেন বিজ্ঞাপনশিল্পকে। থিয়েটার নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক, থিয়েটার স্কুলের অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হিসেবে তাঁর সংযুক্তি বাংলাদেশের নাটক ও সংস্কৃতিচর্চাকে বেগবান করেছে। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বিশ্ব সভাপতি হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালনের পর এখন সংস্থাটির সাম্মানিক সভাপতি।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য।

রামেন্দু মজুমদার ২০০৯ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমির সাম্মানিক ফেলো। তাঁর মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা ৩৪।

প্রখ্যাত অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার তাঁর স্ত্রী। তাঁদের একমাত্র সন্তান প্রতিভাময়ী অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক ত্রপা মজুমদার।